দেহের কোষগুলো বিভাজিত হয়ে আমাদের দেহের ক্ষয়পূরণ করে। বিভাজনের সময় কোন অস্বাভাবিক কোষ বিভাজিত হতে থাকলে তখন এর বিভাজন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় ফলে তৈরি হয় ক্যান্সার কোষ। ক্যান্সার চিকিতৎসার জন্য বহুল পরিচিত একটি পদ্ধতি হলো কেমোথেরাপি।
কেমোথেরাপিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কেমোথেরাপিউটিক এজেন্ট। এই এজেন্টগুলো দেহের দ্রুত বর্ধনশীল কোষকে আক্রমণ করে। ক্যান্সার কোষ দ্রুত বর্ধনশীল তাই এজেন্টের আক্রমণে এদের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এজেন্টের কাজের প্রভাবে ক্যান্সার কোষের সাথে বিপুল সংখ্যক ভালো কোষের মৃত্যু ঘটে ফলে দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। সেই অঙ্গগুলো আর আগের মত কাজ করতে পারেনা।
কেমোথেরাপিউটিক এজেন্টের প্রভাবে ক্যান্সার রোগীর পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা কমে যায় এর ফলে তারা স্বাভাবিক মানুষের মত সহজে সব খাবার হজম করতে পারে না। এই সব রোগীর খাদ্য সরবরাহ করার জন্য কিছু বিষয় ভালো করে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এ সময় থেরাপির প্রভাবে রোগীর খাদ্য পরিপাক সম্পর্কিত অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এসময় কি খাবেন আর কি খাবেন না তা নিয়ে নানামুণির নানা মত দেখা যায়।কেমোথেরাপি রোগীর খাদ্য সম্পর্কে,
কেউ বলে এটা খাও কেউ বলে ওটা খাও আবার অনেকে প্রয়োজনীয় খাবার খেতেও নিষেধ করে। এতেকরে রোগী সুস্থ না হয়ে আরো অসুস্থ হয়ে পরে। তাই সবার মতামত পায়ে পিষে নিজেই জেনে নিন সঠিক তথ্য, কেমোথেরাপির সময় ক্যান্সার রোগীর খাদ্য তালিকা| ক্যান্সার রোগীর কি খাওয়া উচিত:
কেমোথেরাপির সময় পরিপাক সম্পর্কিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো
কেমোথেরাপির সময় সচারাচর দৃষ্ট পরিপাক সম্পর্কিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হলো-
বদ হজম
খাবার সহজে পরিপাক হয় না। পেটে অনেক্ষণ খাবার থাকে।
পেটফাঁপা
হজম দেরিতে হওয়ার জন্য পেট ফাঁপা থাকে। কিছু না খেলেও মনে হয় পেট ভরা।
বমিভাব
খাবার মুখে দিলে বা খাবারের গন্ধ পেলে নাড়িভুঁড়ি উল্টে আসে বমিভাব হয়।
বমি
খাবার গ্রহণ করার পর বমি হয়। পরিপাক তন্ত্রের অনিয়ন্ত্রিত পেরিস্টলসিস প্রক্রিয়ার কারণে বমি হয়।
মুখে ঘাঁ
থেরাপির সময় অনেক রোগীর মুখে ঘাঁ হয়। এসময় খাবার গিলে খাওয়া খুব কঠিন হয়। তীব্র ঝাল,টক খাবার খেতে পারে না।
কোষ্ঠকাঠিন্য
থেরাপির প্রভাবে দেহে ডিহাইড্রেশন হয়। বৃহদান্ত্রে বেশি পানি শোষিত হয় ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়।
ক্ষুধামন্দা ও অরুচি

পরিপাকতন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করেনা বলে ক্ষুধা লাগেনা আর ক্ষুধা না লাগলে তো খাবারের প্রশ্নই আসে না। ক্ষুধাবোধ সৃষ্টিকারী স্নায়ু হয়তো থেরাপির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই খাদ্যে অরুচি সৃষ্টি হয়।খাবারের স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তন হয় খুব প্রিয় কোন খাবারও বিস্বাদ লাগতে পারে কেমোথেরাপির সময়। খাদ্যের গন্ধ পরিবর্তন হয়ে যায়।আগে গন্ধ শুকেই বলতে পারতেন কি রান্না হচ্ছে কিন্তু থেরাপির পর প্রিয় খাবারের গন্ধ আর চিনতে পারবেন না।( কেমোথেরাপির সময় ক্যান্সার রোগীর খাদ্য তালিকা )
কেমোথেরাপি রোগীর খাদ্য তালিকা
কেমোথেরাপি চলাকালে রোগীর খাদ্য নির্বাচন করার সময় ২ টি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, একটি হলো খাদ্য অবশ্যই সহজপাচ্য মানে সহজে হজম হবে অপরটি অল্প খেলেই বেশি ক্যালরি পাওয়া যাবে। কারণ এসময় রোগীর পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা কম থাকে।
কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখে ক্যান্সার রোগীর খাদ্য তালিকা বর্ণনা করা যাক….
বমিভাব হলে কি খাবেন

চালের আটা বা সাদা গমের আটা হালকা ভেজে অল্প চিনি দিয়ে পাতলা হালুয়া বানিয়ে খাওয়া যায়।স্যুপ খেতে হবে কাস্টার্ড ও পুডিং খাওয়া ভালো বেশিক্ষণ ধরে সেদ্ধ ডিম খেতে হবে নরম ভাত,নুডলস,সাধারণ পাস্তা খেতে পারেন।Toast, হালকা রবনাক্ত crackers, natural potato chips or pretzels,Canned fruit, applesauce এবং ফ্রুট জেলি খেতে পারেন।ginger and peppermint চা খেতে পারেন
বমি হলে কি খাবেন

পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যেমন- সেদ্ধ আলু,কলা খেতে হবে।পাতলা স্যুপ খেতে হবে।ভাতের মাড় হালকা লবণ দিয়ে খেতে পারেন।নরম ভাত লবণ দিয়ে মেখে খেতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি খাবেন

উচ্চমাত্রার আঁশ আছে কিন্তু সহজে হজম করা যায় এমন খাবার খেতে হবে যেমন- kidney beans, chickpeas, lentils, fresh fruit, vegetables, dried fruit ইত্যাদি।টক দই খেতে পারেন সকালে গরম পানিতে লেবুর সরবত বানিয়ে খেতে পারেন ইসবগুল রাতে শোয়ার আগে খেতে পারেন।
ডায়রিয়া হলে কি খাবেন

প্রথমে মাথায় যে চিন্তা করবেন তা হলো প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে যাতে ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে পারেন। তরল খাবারের সাথে স্যালাইন পানি খেতে হবে।
এই খাবারগুলো চেষ্টা করুন তরল স্যুপ, চাল বা গমের আটার পাতলা হালুয়া, ভাতের মাড়,সাবু, সুজি ইত্যাদি।
ক্ষুধামন্দা ও অরুচি

খাবারের গন্ধ পছন্দ না হলে তা খাবেন না। জোর করে প্রিয় খাবারও খাবেন না।একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বেশিবার খাবেন। স্যুপ বেশি খাবেন।
মাছের পাতলা ঝোল খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।এই খাবারগুলো চেষ্টা করুন – avocados, nuts, seeds, puddings, cooked cereals, dried fruits.
মুখে ঘাঁ হলে কি খাবেন

বেশি ঝাল ও টক খেতে না পারলে এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।শক্ত খাবার গিলতে না পারলে নরম বা তরল খাবার খেতে পারেন।একটি স্ট্র বা নলের সাহায্যে তরল পদার্থ খাওয়ার চেষ্টা করুন
কেমোথেরাপি পরবর্তী খাবার
সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার,চর্বিহীন প্রোটিন যেমন- ডিম, মাছ, টফু ও মুরগির মাংস,কড়া ঝাঁজের পেঁয়াজ,রসুন,লেবুর রস ও কমলার রস,কাস্টার্ড, ভাত, ডিম, পরিজ ও স্যূপ,আদা পানীয়,মটরশুটি
কেমোথেরাপি রোগী দই খেতে পারবে কি?
হ্যাঁ, দই খেতে পারবে।টক দই বা ইয়োগার্ট খাওয়া ভালো। মিষ্টি দই না খাওয়াই উত্তম।
ক্যান্সার রোগী ফল খেতে পারবে কী?
হ্যাঁ, ফল খেতে পারবে।
পরামর্শ দিয়েছেন
ড. এস,এম,ডেভিডসন
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
কলরাডো,আমেরিকা